About Us | Contact Us |

বাঙালিবিদ্বেষ থেকে ইসলামবিদ্বেষ: বাণিজ্য যুদ্ধের সফল মডেল

বাঙালিবিদ্বেষ থেকে ইসলামবিদ্বেষ: বাণিজ্য যুদ্ধের সফল মডেল

আজকের বাঙালিবিদ্বেষ ও মুসলমানবিদ্বেষের মধ্যে কি আদৌ কোনো ফারাক আছে? জট যখন 'বাঙালি মুসলমান' তখন ইতিহাস দেখিয়ে দেয় এই দুই প্রকারের বিদ্বেষ আদতে মূলত একই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক যুদ্ধেরই সন্তান এবং এই দুই ধরণের বিদ্বেষের মধ্যে ফারাক কিছু থাকলেও, প্রধান মিল হল তারা আজ অবধি ইওরোপের লুঠেরা ব্যবসায়ীদের মুনাফার প্রধান ঢাল হয়ে আছে।  

এই সংক্ষিপ্ত লেখায় আজকের প্রয়োজন মেনে আমরা এই জট অল্প সরিয়ে সরিয়ে দেখব, জাতিবিদ্বেষের প্রাতিষ্ঠানিক স্থাপনা জাতীয়তাবাদের প্রধান রক্ষক পুজিপতিরা কীভাবে: বাঙালি বিদ্বেষ আর ইসলাম বিদ্বেষ ব্যবহার করে দক্ষিণ এশিয়া ও যথাক্রমে সারা বিশ্বের ব্যবসাবাণিজ্য ও উৎপাদন নিজেদের দখলে এনে একদিকে বিপুল ধনসম্পদ আর একদিকে বিপুল দারিদ্য তথা বৈষম্য উত্তরোত্তর বাড়িয়ে চলেছে। 

আজ থেকে মাত্র পাঁচশো বছর আগে প্রথম ইওরোপিয় বণিকেরা ভারতবর্ষ আসবার সমুদ্রপথ আবিষ্কার করতে গিয়ে প্রথমে আমেরিকা এবং ৬ বছরের মধ্যেই দক্ষিণ এশিয়ার নৌপথের সন্ধান পান। যে সময়কালকে আমরা ডাচ, ব্রিটিশ ও পোর্তুগীজ দস্যুদের [যাদের বণিক বলা হয়] হাতে পুঁজির আদিম সঞ্চয়নকালের শুরুবাদ বলতে পারি। যে সময়টি আমেরিকা থেকে লুঠ করা ধাতু আর আফ্রিকার দেড় কোটি উৎপাদকদের ক্রীতদাস বানিয়ে ব্যবসার লাভজনক দিগন্ত ইওরোপিয় 'বণিক'দের জন্য খুলে দিচ্ছে এমন সময়টিকে ইতিহাসে আরো ভালোভাবে খেয়াল করা দরকার কারণ এই সময়ের মধ্যেই আসলে লুকিয়ে আছে আজকের আন্তর্জাতিক চক্রগুলির মূল ধান্দার প্রকৃত স্বরূপ। 

ক্রীতদাসতন্ত্র ও ভূমিদাসতন্ত্রকে সংস্কারের মাধ্যমে আত্তীকরণ করা খ্রিস্টান যাজকতন্ত্র [যীশুবিরোধী] যে ধর্মতাত্ত্বিক শোষণ কাঠামো খাড়া করে - তার বিপরীতে মহম্মদের বৈপ্লবিক আবির্ভাব শোষক যাজক ও দস্যুদের নতুন প্রকারের দাসতন্ত্র মজুরি দাসত্বকেও তার আচার ও ধর্মীয় স্থাপনা থেকে বর্জন করছে [দেহ, জমি আর মুদ্রা ভাড়া দেয়া ইসলামে নিষিদ্ধ ঘোষণা করছে]: এটি মহম্মদের জীবনীনির্ভর 'দ্য মেসেজ' নামক অপূর্ব ছবিটিতে যেমন দেখানো হয়েছে তেমন ভাবেই শুধুমাত্র খ্রিস্টান যাজক ও পাদ্রীদের নিশানার বস্তু ছিলনা উপরন্তু উত্থানরত দস্যু বণিক যুদ্ধবাজদেরও চোখের শূল ছিল, যারা হবেন এরপর আধুনিক বিশ্ব ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক। আজ থেকে প্রায় এক হাজার বছর আগে উসমেনিয়দের তুর্কিবিজয় এবং তুর্কিদের ভারতবিজয় - দক্ষিণ এশিয়া থেকে ইওরোপের স্থল-বাণিজ্যপথটিকে ইওরোপীয় দস্যুদের জন্য খতরা বানিয়ে ফেলে, যার পর থেকেই 'হিন্দুস্তান' আবিষ্কারের লক্ষ্যে ইওরোপের দস্যু বণিকেরা যুদ্ধজাহাজ-সেনাবাহিনী-অভিযানের সমস্ত বাজেট ব্যবস্থাদি খ্রিস্টান রাজতন্ত্রের কাছ থেকে উপঢৌকন স্বরূপ পেতে থাকেন। 

পঞ্চদশ শতাব্দী শেষ হতে না হতেই ইওরোপিয়দের হাতে সরাসরি লুঠের মাল হিশাবে এল অফুরন্ত ধাতু [সোনা এবং রূপো], যা তারা এতদিন রেশম পথের মাধ্যমে মধ্য এশিয়া ও পূর্ব এশিয়ার নানা দেশ থেকে [বিশেষ ভাবে তিব্বত থেকে] পশমের বিনিময়ে পেতেন; ১৪৯২ সাল ও তারপরের আমেরিকা 'আবিষ্কার', গণহত্যা ও লুটের মাধ্যমে পাওয়া ধাতু দিয়েই তারা এখন তাদের প্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্য বিশাল এশিয়ার বাজার থেকে কিনতে লাগলেন। 

শত্রু মুসলমান, যাদের জন্য তাদের মধ্য এশিয়ার স্থল-বাণিজ্য পথটি চারশো বছর ধরে দুর্গম, সমুদ্রপথে 'হিন্দুস্থানে' এসে তারা দেখলেন এখানেও [হরপ্রসাদ শাস্ত্রীর কথা মতন- বাঙ্গালার ইতিহাস, ভূপেন্দ্রনাথ দত্ত] 'লোকে হুড়হুড় করে মুসলমান হয়ে গিয়েছেন' - তাদের আসবার বহু আগেই। উপরি হিশাবে কয় দফা সুলতানি শাসন তিব্বত থেকে কাঁড়ি কাঁড়ি রুপো এনে হিন্দুস্তানের সবচেয়ে সমৃদ্ধ এলাকায় অসংখ্য টাকশালের মাধ্যমে বিপুল মুদ্রারূপী ধনসম্পদ ধর্মনির্বিশেষে সকল বণিকের ট্যাকে জমাতে শুরু করেছে,  মুঘল প্রশাসন বাণিজ্য বৃদ্ধি করে যাকে বিশ্বের ধনাঢ্যতম উৎপাদন কেন্দ্র ও সুলভতম বাজার বানিয়ে রেখেছে। 

ইওরোপের বণিকরূপী শাসকশ্রেণির দস্যুরা এই দেশে নিজেদের উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখতে পেলেন স্থানীয় শ্রমবিভাগকে আত্তীকরণ করা ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মীয় কাঠামোর মধ্যে, যা মূলত খ্রিস্টান যাজকতন্ত্রের মতোই উৎপাদকদের শ্রমশক্তি শোষণের উদ্দেশ্যে সবর্ণদের [কায়স্থ, ব্রাহ্মণ, বৈদ্য: সংক্ষেপে 'কাবাব'] এমন অবকাঠামো - যাকে প্রত্যাখ্যান করে এবং যার থেকে বাঁচার জন্য হিন্দুস্থানের বহু সম্প্রদায় ও ধর্মের লোকেরা 'হুড়হুড়' করে মুসলমান হয়েছেন। স্বভাবতই এই অবকাঠামো, যাকে এতদিন সবর্ণরা ছাড়া কেউই তেমন পাত্তা দিত না, তা গাঠনিক ভাবেই ইসলামবিরোধী। ইওরোপিয়রা এই সুযোগ আর হাতছাড়া করেন নি, আজ পাচশো বছর ধরে বিশ্বের অর্ধেক লোককে বোকা বানিয়ে প্রমাণ করে রেখেছে যে সারা বিশ্বের জ্ঞান, বিজ্ঞান, প্রযুক্তির আসল উদ্ভাবক তারাই। মার্টিন বার্নল তার 'ব্ল্যাক এথেনা' গ্রন্থে দেখাচ্ছেন: যে ইওরোপিয় দস্যু বণিকরা একদা বই পোড়ানিয়া জাতি বলে পরিচিত ছিল, তারাই একদা বইয়ের গুরুত্ব বুঝে আরবদেশ ও এশিয়ার আরো নানা দেশ থেকে হাজার হাজার গ্রন্থাগার লুঠ করা শুরু করে; ভারতবর্ষ থেকে লুঠ করে আন্দাজ তিন কোটি পুথি-পত্র। পরে গ্যালারির আদলে এই যুদ্ধবাজগুলা যখন গ্রীসকে আবার নতুন করে গড়বেন ও দেখাবেন এই গ্রীসই হল গোটা বিশ্বের 'আধুনিক' জ্ঞানভাণ্ডারের উৎস এবং গ্রীসের ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাস থেকে আরব ও আফ্রিকার আদিতম সম্পর্কগুলিকে ছাইচাপা দেবেন, তখন চোখ খোলা অন্ধজন ছাড়া আমাদের সকলের কাছে পরিষ্কার হয় গোটা বিশ্বে আরবদের খুনী বর্বর হত্যাকারীর জাত প্রমাণ করবার আসল উদ্দেশ্য কী: নিরঙ্কুশ লুঠতন্ত্র চালানো। 

এঙ্গেলস লিখবেন, আমরাও মাথা নত করে বিশ্বাস করে নেব ইংলণ্ডের 'উন্নত' যন্ত্রসভ্যতার সামনে ভারতীয় 'সামন্ততন্ত্রের' পতনের কথা; যেন ১৭৫৭ সালেই প্রথম ইওরোপের সাথে যুদ্ধ হল, আগে যেন হয় নাই। তখন তাদের বোমা বন্দুকের প্রযুক্তি হাজার হাজার গতিশীল ঘোড়া আর সেকেণ্ডে তিনটি করে তীর খেয়ে পালিয়েছে, আমরা বেমালুম ইতিহাসের শিকার বনে নিজের দেশকে [যা কিনা জ্ঞানে, সম্পদে, প্রেমে শ্রেষ্ঠ ধনী] ভুলে গিয়ে আজ অবধি ইওরোপের ভাষা, আপিয়ারেন্স দেখে শরীরে অর্গাজম ফীল করব, স্বদেশিকে গাইয়া পশ্চাদপদ 'অসভ্য' বলে গালি দেব  আর টুপি দাড়ি দেখলেই আতঙ্কে, ঘৃণায় মূর্চ্ছা যাব। ভুলে যাব, বা জানবই না, আদতে আমার দেশই ইওরোপকে একদা পাতলা কাপড় পরতে শিখিয়েছিল, কিম্বা ইওরোপের নৌবিদ্যা আদতে আমার দেশ থেকে চুরি করা, ভুলে যাব যে জ্ঞান বিজ্ঞানকে বরাত করে তারা বিশ্ব শাসনের রাহাজানি করছে তা আরবের লাখ কোটি মুক্ত উৎপাদকদের স্বাধীন জ্ঞানচর্চার ফসল। 


যারপরনাই গত হাজার বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক যুদ্ধ পলাশীর যুদ্ধ, ১৭৫৭ সালে ইস্ট ইণ্ডিয়া কোম্পানির ভারতবিজয়ের মাধ্যমে, রুপোর বিনিময়ে সারা বিশ্বে ব্যবসা করার বাধ্যতা থেকে মুক্তি লাভ করল ব্রিটিশ তথা ইওরোপিয়রা। অমিয় কুমার বাগচী দেখাচ্ছেন এই নতুন ধরণের 'গণতান্ত্রিক সাম্রাজ্যবাদ'-এর উদ্দেশ্য আর দেশজয় করে সেখানকার অধিবাসী হয়ে শাসনকার্য চালানো নয়, বরং এর নিয়ম হচ্ছে 'মুনাফার জন্য ক্ষমতা, ক্ষমতার জন্য মুনাফা' যার নির্দিষ্ট লক্ষ্য হচ্ছে লুঠ চালানো। পলাশীর পর আমরা দেখলাম বিশ্বের প্রথম Structural Adjustment Policy বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদশালী স্বাধীন দক্ষ উৎপাদকদের দেশ থেকে সম্পদ, শ্রম ও দক্ষতার স্থায়ী লুটের ব্যবস্থা গড়ে তুলতে ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী উপনিবেশিক রাষ্ট্র নির্মাণ করল যার মতাদর্শিক স্থাপনার ভিত্তিই হল ইসলামবিদ্বেষ। সংস্কৃতে 'সার্টিফিকেটলেস' মোক্ষমুলার সাহেব প্রতিপন্ন করলেন এতদিন হিন্দুস্তানে ছিল 'ইসলামী শাসন'; আর্যদের মেলায় খোয়া যাওয়া ব্রিটিশ ভাই বেরাদররা সেই বর্বর বৈষম্যমূলক 'ইসলামী শাসন' থেকে 'হিন্দুদের' মুক্তি দিয়েছেন। যুদ্ধবাজ লর্ড ক্লাইভ আর বিশ্বাসঘাতক মীর জাফর, রামমোহন রায়রাই নাকি আদতে হিন্দুদের উদ্ধারকর্তা। যে 'হিন্দুস্তান' ছিল সিন্ধু নদীর তীরে বসবাসকারীদের অধিবাস, সেই হিন্দুস্তান পরিণত হল ব্রাহ্মণ্য ধর্মের লোকেদের কিংবা সরাসরি মুসলমান, বৌদ্ধ ছাড়া সকল ধর্মসম্প্রদায়ের লোকের নতুন পরিচয় 'হিন্দু'-দের অধিবাসে। হিন্দু নামে যেখানে কোনো ধর্মই ছিল না, সিন্ধুর তীরে বসবাসকারী বিভিন্ন ধর্মের লোককে যেখানে ধর্মনির্বিশেষে হিন্দু বলা হত; সেইখানে ব্রিটিশদের তৈরি প্রথম সেন্সাসে মুসলমান, বৌদ্ধ ছাড়া হিন্দুস্তানের সকলেরই ধর্ম পরিচয় লেখা হল 'হিন্দু', আর যে ধর্মের প্রধান বৈশিষ্ট্যই হল মুসলমানবিদ্বেষ। 

জ্ঞানগঞ্জ মাসিক পুঁথি 'টডের তরবারি: ভদ্রবিত্তের ইসলামোফোবিয়ার উৎস সন্ধানে', দ্বিতীয় আলাপ পুথি নন্দিনী ভট্টাচার্য পান্ডার সাক্ষাৎকার পুঁথিতে এবং আর্য অভিবাসন তত্ত্ব ও ভদ্রবিত্ত ব্রাহ্ম সমাজ' পুঁথিতে দেখিয়েছে ব্রিটিশদের এই নতুন উপনিবেশিক রাষ্ট্র নির্মিতই হয়েছে সাম্রাজ্যের আমলা জেমস টড, হ্যালহেড, উইলিয়াম জোনস, কোলব্রুক, ম্যাক্সমুলারদের লেখা ইতিহাস নামক ইসলামবিদ্বেষী গাল গল্প ও ব্রাহ্মণ্য ধর্ম শাস্ত্র গুলির নতুন ইসলামবিদ্বেষী, নারীবিদ্বেষী 'ধর্মতাত্ত্বিক' আত্তীকরণ দ্বারা, 'বাঙলার রেনেসাঁ' যাকে আদতে আমাদের সমৃদ্ধিশালী, ধনাঢ্য বঙ্গসভ্যতার পতনের কাল বলা উচিৎ, সেই রেনেসাঁর বাঙালি দিকগজরা এই ধ্বংসযজ্ঞের আরম্ভ ছিয়াত্তরের গণহত্যায় এক কোটি বাঙালির হত্যাকে মণ্বন্তর নাম দেবেন আর আমাদের শিক্ষা, বুদ্ধি, সংস্কার, নীতি সকলই ইংরাজ প্রভুদের উপনিবেশিক স্বার্থে ইংরাজমুখী করে তুলবেন। 

এই আত্তীকরণ ধর্মতাত্ত্বিক ভাবে নতুন ও উপনিবেশিক, যার প্রধান স্বার্থ এই সব ব্রাহ্মণ্য শাস্ত্রের বিধানগুলিকে মুসলমান ছাড়া বাকি সকলের জীবনের ধর্ম বানিয়ে ফেলা এবং এর নাম দেওয়া হিন্দু ধর্ম। হিন্দু মেলা, ব্রাহ্মসমাজ, রামকৃষ্ণ মিশন, হিন্দু মহাসভা, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ - সকলে এরপর যার ধ্বজা ধরে চলবেন।  

আমাদের মনে রাখা দরকার এই 'কাবাব'রা পলাশীর যুদ্ধের আগেও সমাজে ছিলেন, ইসলামবিদ্বেষ নিয়েই ছিলেন, কিন্তু তাদের কোনো কুস্বার্থের সঙ্গে হিন্দুস্তানের রাষ্ট্র কোনোদিন ছিল না। ঘটনা হল, ইসলামবিদ্বেষকে রাষ্ট্র কাঠামোয় তাত্ত্বিক ভাবে সামিল করা নতুন 'হিন্দু' ধর্মীয় জাতীয়তাবাদের মধ্যে এই কাবাবরা তাদের স্বার্থ দেখেছিলেন বলেই ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের তারা একচ্ছত্র সমর্থক বনে গিয়েছিলেন। এমনকি এদেশে ব্রিটিশদের হাত ধরে পত্তন হওয়া পিতৃতান্ত্রিক জমিদারতন্ত্রের প্রথম দিককার নেতা 'ভারতপথিক' রামমোহন রায় কিম্বা ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা কেশবচন্দ্র সেন, এরা ব্রিটিশ যুদ্ধবাজদেরকে ভারতের উদ্ধারকর্তা প্রচার প্রমাণ করলেন। 
 
অজস্র জাতি ধর্ম সম্প্রদায়ের জনতা যারা এক ধর্ম এক জাতি হিন্দু বনে গিয়ে উপনিবেশিক লুট স্থায়ী রাখার কল জাতীয়তাবাদী হিন্দুরাষ্ট্রের বাধ্য প্রজায় পরিণত হলেন এবং অতঃপর যে ইসলাম জাতীয়তাবাদ ও জাতীয়তাবাদের মূল স্বার্থ দাসত্বকে বিপ্লবীভাবে প্রত্যাখ্যান করে একদা বিজয়ী হয়েছিল তাকেও জাতিবাদী সাম্প্রদায়িক নারীবিদ্বেষী ও আজ যথাক্রমে পুজির সঙ্গী বানিয়ে ফেলেছে। 

আর এখন যুগ হলো আপামর বাঙ্গালীদের বাঙালিবিদ্বেষের এবং আপামর মুসলমানদের মুসলমান-বিদ্বেষের। ইসলামিজম বলতে এখন আমরা সকলেই জঙ্গিপনা বুঝি। বণিক বলতেই ইওরোপিয় দস্যুদের বুঝি, যেনবা আর কোন দেশে কোন বণিক ছিল না। বুঝি বণিক মানেই লুঠেরা, আর ব্যবসা মানেই ঘাড়ভাঙা [আর শ্রম মানেই হাড়ভাঙা]। দেখি, বহাল তবিয়তে ইওরোপিয় যুদ্ধবাদের নির্মিত এই ধর্মতাত্ত্বিক কাঠামো ও জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রকাঠামো এখনো বিশ্বজুড়ে মুসলমানদের গণহত্যা থেকে অক্ষুণ্ণ লুঠেরা ব্যবসা বাড়িয়ে চলেছে, আর ইদানিং ভারতবর্ষে আমরা দেখছি বাঙ্গালীদের ধর্ম নির্বিশেষে বাংলাদেশী বলে হত্যা ও বিতাড়ন। ইতিহাস এমনই শঙ্খিল, একদিন যারা 'কাবাব'দের লাটে তুলে সকল সম্প্রদায়কে বলপূর্বক হিন্দু বানিয়ে ব্যবসার নতুন অধ্যায় শুরু করেছিল, তারাই আজ 'কাবাব' বাদে বাকিদের মধ্যে ছুপা 'বাংলাদেশী', প্রকারান্তরে 'মুসলমান' খুজতে শুরু করেছে এবং তারাই কাল 'কাবাব'-ভুক্ত বাঙ্গালীদেরকেউ এমনকি ছুপা 'বাংলাদেশী', 'মুসলমান' বলে খেদানোর উপক্রম করবে। কি মনে হয় বন্ধুরা, সমস্যাটা কি একান্তই ভাষার?

তীর্থরাজ ত্রিবেদী 
তীর্থরাজ ত্রিবেদী 

প্রবন্ধকার